অভিব্যক্তি
Evolution |
1. অভিব্যক্তি কাকে বলে?
উত্তর: যে মন্থর ও গতিশীল ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় কোন উদবংশীয় সরলতম জীব থেকে ক্রমান্বয়ে জটিল জীবের উদ্ভব হয় ,তাকে অভিব্যক্তি বা বিবর্তন বলে।
2. রাসায়নিক বিবর্তনবাদ কী?
উত্তর: সরল অজৈব অনু থেকে রাসায়নিক বিক্রিয়ার সাহায্যে পৃথিবীর আদি ইতিহাসে যে প্রক্রিয়ায় সমুদ্রের জলে জৈব অণু সৃষ্টি হয় তাকে রাসায়নিক বিবর্তনবাদ বলে।
3. কোয়াসারভেট কী?
উত্তর: আদিম পৃথিবীতে উত্তপ্ত সামুদ্রিক পরিবেশে আন্তঃআণবিক আকর্ষণের প্রভাবে বৃহৎ জৈব অণু গুলি পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হয়ে বৃহদাকার কলয়েডীয় দানা গঠন করে, যার বাইরে লেসিথিন, সেফালিন নির্মিত কোশপর্দার মতো দ্বিস্তরীয় আবরণ থাকে, তাকে কোয়াসারভেট বলে।
4. মাইক্রোস্ফিয়ার কী?
উত্তর: অ্যামাইনো অ্যাসিড থেকে সৃষ্ট প্রোটিনয়েড অনুগুলি জলের সংস্পর্শে এসে প্রায় 1-4 মাইক্রোমিটার ব্যাস বিশিষ্ট ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গোলাকার কণা সৃষ্টি করে, যারা বিভাজনে সক্ষম এবং কোষ পর্দার মতো দ্বিস্তরীয় আবরণ বিশিষ্ট। বিজ্ঞানী সিডনি ফক্স এই গোলাকার কণাকে মাইক্রোস্ফিয়ার নামকরণ করেন।
5. হট ডাইলুট সুপ কী?
উত্তর: আদিম পৃথিবীতে উত্তপ্ত সমুদ্রের জলে রাসায়নিক বিবর্তন বা কেমোজেনির ফলে শর্করা ,অ্যামাইনো অ্যাসিড, ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অন্যান্য সরল ও জটিল জৈব যৌগের উৎপত্তি ঘটে। বিজ্ঞানী হ্যালডেন সমুদ্রের উত্তপ্ত জল ও বিভিন্ন জটিল জৈব অণুর মিশ্রণকে হট ডাইলুট সুপ নামে অভিহিত করেছেন।
6. ল্যামার্কবাদ কী?
উত্তর: অভিব্যক্তি বা বিবর্তনের ব্যাখ্যায় ফরাসি প্রকৃতিবিদ ল্যামার্ক তার লিখিত পুস্তক 'ফিলোজফিক জুওলজিক' গ্রন্থে তার মতবাদ প্রকাশ করেন। ল্যামার্ক প্রবর্তিত এই মতবাদকে ল্যামার্কবাদ বলে।
7. ল্যামার্কের অঙ্গের ব্যবহার ও অব্যবহার সূত্রটি লেখ।
উত্তর: জীব পরিবেশে নিজেকে অভিযোজিত করার জন্য সজ্ঞানে নিজের চেষ্টায় কোন কোন অঙ্গ অধিক মাত্রায় ব্যবহার করে, ফলে তা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ও সুগঠিত হয়। আবার কোন কোন অঙ্গের ব্যবহার কম বা একেবারে ব্যবহার না করায় সেই সকল অঙ্গ ক্ষয়প্রাপ্ত হয় কালক্রমে লুপ্ত হয়ে যায়।
উদাহরণ: ল্যামার্ক তার মতবাদ এর স্বপক্ষে জিরাফের গলা লম্বা হওয়ার কথা বলেন। তার মতে জিরাফের পূর্বপুরুষদের গলা লম্বায় ছোট ছিল, কিন্তু নিচের খাবারে ঘাটতি হওয়ায় উঁচু গাছ থেকে খাদ্য সংগ্রহের জন্য ক্রমাগত চেষ্টা চালানোর ফলে এদের গলা লম্বা হয়েছে।
8. অস্তিত্বের জন্য জীবন সংগ্রাম বলতে কী বোঝো?
উত্তর: জীব তার নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য নিরন্তন প্রচেষ্টা চালায় সীমিত খাদ্য এবং বাসস্থানের কারণে । তাদের প্রতিনিয়ত এই প্রতিযোগিতা চালিয়ে যেতে হয় এবং এর ফলে সৃষ্ট প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে অস্তিত্বের জন্য জীবন সংগ্রাম বলে।
জীবন সংগ্রাম প্রধানত তিনটি পর্যায়ে চলে -
1. অন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম: একই প্রজাতির বিভিন্ন জীবের মধ্যে খাদ্যের জন্য বেঁচে থাকার যে সংগ্রাম তাকে অন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম বলে।
যেমন: ছাগলের সঙ্গে ছাগলের সংগ্রাম।
2. আন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম: যখন দুই বা ততোধিক প্রজাতির অন্তর্গত জীবগুলির বাঁচার জন্য যে সংগ্রাম করে , তখন তাকে আন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম বলে।
যেমন: খাদ্যের জন্য কুকুর-বিড়ালের সংগ্রাম।
3. পরিবেশের সঙ্গে সংগ্রাম: অতিরিক্ত আর্দ্রতা, ঠান্ডা ,বন্যা ,খরা, ভূমিকম্প প্রভৃতি পরিবেশগত প্রতিকূলতার সঙ্গে সংগ্রাম করতে হয় ,তখন তাকে পরিবেশের সঙ্গে সংগ্রাম বলে।
9. যোগ্যতমের উদবর্তন বলতে কী বোঝো?
উত্তর: ডারউইনের মতে, জীবন সংগ্রামে লিপ্ত জীব গুলির মধ্যে যাদের দেহের ছোট ছোট অভিযোজন মূলক বৈশিষ্ট্য এসে যায় তারাই জীবন সংগ্রামে জয়ী হয় এবং বেঁচে থাকার অধিকারী হয়, অন্যরা কালক্রমে পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় ।জীবন সংগ্রামে এই উত্তরনকে যোগ্যতমের উদবর্তন বলে।
উদাহরণ: মেরু অঞ্চলের বড় লোমওয়ালা কুকুর সেই দেশে বসবাসের যোগ্য হলেও গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলে বসবাসের অযোগ্য।
10. ভেদ বা প্রকরণ কী?
উত্তর: ডারউইনের মতে পৃথিবীতে দুটি জীব কখনোই অবিকল একই রকম হতে পারে না অর্থাৎ দুটি জীবের মধ্যে কিছু না কিছু পার্থক্য বা ভেদ থাকবেই এমনকি পিতা-মাতার দুটি সন্তানের মধ্যে কিছু না কিছু পার্থক্য পরিলক্ষিত হবে ,ডারউইন মনে করতেন যে অবিরত সংগ্রামের ফলে জীবদেহে প্রকরন বা ভেদ সৃষ্টি হয়, যা প্রজননকাল অপত্যের দেহে সঞ্চারিত হয়ে থাকে এবং পরিশেষে জীবের বৈশিষ্ট্য রূপে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে।
11. প্রাকৃতিক নির্বাচন বলতে কী বোঝো?
উত্তর: যে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় অনুকূল ভেদ বা অভিযোজন মূলক ভেদ সমন্বিত জীবেরা অন্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অধিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে, তাকে প্রাকৃতিক নির্বাচন বলে।
ডারউইন তত্ত্বের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্রাকৃতিক নির্বাচন। অনুকূল ভেদ সমন্বিত জীবেরা প্রকৃতি দ্বারা নির্বাচিত হলে, অধিক সংখ্যায় বেঁচে থাকে, এবং অধিক হারে বংশবিস্তার করে। অপরপক্ষে, প্রতিকূল ভেদ সমন্বিত জীবেরা প্রকৃতি দ্বারা নির্বাচিত হয় না বলে, পরাজিত সৈনিকের মতো ধীরে ধীরে অবলুপ্ত হয়।
12. প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্বের মূল ব্যাখ্যা কী?
উত্তর: জীব জ্যামিতিক হারে বংশবিস্তার করে অপত্য উৎপাদন করে। কিন্তু পৃথিবীতে খাদ্য ,বাসস্থান প্রভৃতির অপ্রতুলতার জন্য সকল জীবকে জীবন সংগ্রামে লিপ্ত হতে হয়। জীবন সংগ্রামে লিপ্ত জীবদের মধ্যে যারা উন্নত প্রকরণ যুক্ত হয় তারা প্রাকৃতিক নির্বাচন লাভ করে, পৃথিবীতে বেঁচে থাকার বেশি সুযোগ পায় এবং পরিবেশের সফলভাবে অভিযোজিত হওয়ার বৈশিষ্ট্য নিয়ে বেশি অপত্য উৎপন্ন করে। কালক্রমে ঐরূপ অনেক উন্নত বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়ে নতুন প্রজাতির সৃষ্টি হয়।
13. ডারউইনবাদের ত্রুটি লেখ।
উত্তর: 1. ডারউইন মিউটেশনের ব্যাখ্যা দিতে পারেননি, তিনি মিউটেশনকে প্রকৃতির খেলা বলে অভিহিত করেছেন।
2. ডারউইনবাদ যোগ্যতমের উদবর্তনের কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।
3. ডারউইন প্রকরণের উৎপত্তি সম্পর্কে কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।
4. দেহ কোষ ও জনন কোষের প্রকরণের পার্থক্য বিষয়ে ডারউইনের কোন ধারণা ছিল না।
5. নিষ্ক্রিয় অঙ্গের উপস্থিতির কারণে ডারউইন বাদের দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায় না।
14. ডারউইনবাদ কী?
উত্তর: 1859 খ্রিষ্টাব্দে চার্লস ডারউইন তার বিভিন্ন দ্বীপপুঞ্জের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা এবং নমুনা গুলির উপর পর্যবেক্ষণ নির্ভর করে অভিব্যক্তি সম্পর্কে স্পষ্ট যুগান্তকারী মতবাদ প্রকাশ করেন, যা তার লেখা বই "অন দ্য অরিজিন অফ স্পিসিস বাই মিনস অফ ন্যাচারাল সিলেকশন" নামক গ্রন্থে প্রকাশ করেন। ডারউইনের এই মতবাদকে ডারউইনবাদ বলা হয়।
15. অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরন ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ল্যামার্কের মতে পরিবর্তিত পরিবেশে নিজেকে অভিযুক্ত করার ফলে, জীবদেহে তার জীবন কালে যে সকল বৈশিষ্ট্য অর্জিত হয় তা অপত্য জনুতে সঞ্চারিত হয়।
উদাহরণ : উঁচু গাছ থেকে খাদ্য সংগ্রহের ফলে জিরাফের গলা লম্বা হওয়ার যে বৈশিষ্ট্য অর্জিত হয়, তা পরবর্তী জনু উত্তরাধিকারসূত্রে লাভ করে, ফলে কয়েক জনু ধরে জিরাফের গলা লম্বা হয়।
16. জিরাফের গলা লম্বা হওয়া প্রসঙ্গে ডারউইনের মতবাদ কী?
উত্তর: ডারউইনবাদ অনুসারে জিরাফের লম্বা গলা অভিব্যক্তি ল্যামার্কবাদ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। ডারউইনবাদ অনুসারে উদবংশীয় জিরাফের দলে বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের গলা সমন্বিত জিরাফ বর্তমান ছিল। উঁচু ডালের পাতার নাগাল পাওয়ার জন্য দীর্ঘতম গ্রীবার উদবংশীয় জিরাফই প্রাকৃতিক নির্বাচনের অনুকূল পায়, দীর্ঘকাল প্রাকৃতিক নির্বাচনের আনুকূল্যে অভিযোজন মূলক বৈশিষ্ট্যটি একজনু থেকে অপরজনুতে সঞ্চারিত হয়। এবং কয়েকজন এরপর দীর্ঘ গ্রীবা সমন্বিত জিরাফ দলের আবির্ভাব ঘটে। বর্তমানকালের জিরাফ এর মধ্যেও গ্রীবার দৈর্ঘ্যের তারতম্য দেখা যায়। তবুও বর্তমানকালের সমস্ত জিরাফের গ্রীবা সুদীর্ঘ।
17. জীবাশ্ম কাকে বলে?
উত্তর: বহু বছর ধরে মাটির নিচে বিভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে পাললিক শিলাস্তরে সম্পূর্ণ বা আংশিক প্রস্তরীভূত অবস্থা বা ছাপকে জীবাশ্ম বলে
18. জীবন্ত জীবাশ্ম কাকে বলে?
উত্তর : কোন কোন জীব গোষ্ঠীর কিছু কিছু জীব সুদূর অতীতে জন্মলাভ করেও প্রায় অপরিবর্তিত অবস্থায় এখনো পৃথিবীতে বেঁচে আছে কিন্তু তাদের সমসাময়িক জীবদের অবলুপ্তি ঘটেছে। এসব জীবদের জীবন্ত জীবাশ্ম বলে।
19. নিষ্ক্রিয় অঙ্গ কাকে বলে?
উত্তর: জীবদেহের যে সমস্ত অঙ্গের কার্যকারিতা না থাকায় বর্তমানে আকারে ক্ষুদ্র বা লুপ্তপ্রায় অঙ্গে পরিণত হয়েছে। কিন্তু তাদের পূর্ব পুরুষের দেহ বা সমকালীন অন্যান্য জীবের এই সমস্ত অঙ্গ কার্যকারী ছিল বা আছে তাদের নিষ্ক্রিয় অঙ্গ বলে।
20. মিসিং লিঙ্ক কী?
উত্তর: দুটি ভিন্ন জীব গোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য বহনকারী যে সমস্ত সংযোগ রক্ষাকারী জীব বর্তমানে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। তাদের মিসিং লিঙ্ক বলে।
21. জৈব অভিব্যক্তির অঙ্গসংস্থান গত প্রমাণ হিসেবে বিভিন্ন মেরুদন্ডী প্রাণীগোষ্ঠীর হৃৎপিণ্ডের মৌলিক গঠন আলোচনা করো।
উত্তর: বিভিন্ন মেরুদন্ডী প্রাণীদের হৃৎপিন্ডের গঠনগত মিল থেকে অভিব্যক্তির প্রমাণ পাওয়া যায়। মাছ থেকে শুরু করে উভচর ,সরীসৃপ পক্ষী ও স্তন্যপায়ী প্রাণীদের হৃৎপিণ্ড পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে কিভাবে সরল হৃৎপিণ্ড থেকে জটিল ও জটিলতর হৃৎপিন্ডের সৃষ্টি হয়েছে।
1. মাছের হৃৎপিণ্ড সর্বাপেক্ষা সরলতম, তাদের হৃৎপিন্ডের দুটি প্রকোষ্ঠ এবং একটি অলিন্দ ও একটি নিলয় রয়েছে। হৃৎপিন্ডে একটি চক্রের মাধ্যমে সর্বদা দূষিত রক্ত প্রবাহিত হয়।
2. উভচরদের হৃৎপিণ্ড দুটি অলিন্দ ও একটি নিলয় নিয়ে গঠিত। অলিন্দ দুটি আন্তঃ অলিন্দ পর্দা দিয়ে পৃথক থাকায় দূষিত ও বিশুদ্ধ রক্ত পৃথক থাকার প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু নিলয় যেহেতু এক প্রকোষ্ঠ যুক্ত তাই উভয় রক্ত মিশে যায়।
3. সরীসৃপের ক্ষেত্রে অলিন্দ আন্তঃঅলিন্দ পর্দা দিয়ে পৃথক এবং নিলয়টি অর্ধবিভক্ত হওয়ায় এখানে উভয় রক্ত আংশিকভাবে পৃথক রাখার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
4. পক্ষী ও স্তন্যপায়ী প্রাণীদের হৃৎপিন্ডের চারটি প্রকোষ্ঠ লক্ষ্য করা যায়, দুটি অলিন্দ ও দুটি নিলয় এদের হৃৎপিন্ডে ক্রমশ জটিলতর হয়েছে। হৃৎপিন্ডের বাম দিকের প্রকোষ্ঠগুলি বিশুদ্ধ রক্ত এবং ডানদিকের দূষিত রক্ত পৃথকভাবে অবস্থান করে।
সুতরাং, গঠনগত হৃৎপিন্ডের এই পরিপূর্ণতা এবং সরল থেকে ক্রমশ জটিলতর হৃৎপিণ্ডের আবির্ভাব নিঃসন্দেহে অভিব্যক্তি স্বপক্ষে প্রমাণ দেয়।
22. অভিব্যক্তির মতবাদ স্বপক্ষে জীবাশ্ম ঘটিত প্রমাণটি আলোচনা করো।
উত্তর: ঘোড়ার জীবাশ্মের ইতিহাস পর্যালোচনা
করলে আমরা যে তথ্য পায় তা হল - আধুনিক ঘোড়া ইকুয়াস তার পূর্বপুরুষ ইওসিন যুগের ইওহিপ্পাস থেকে নিন্মলিখিতভাবে বিবর্তনের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে।
ইওহিপ্পাস - মেসোহিপ্পাস-মেরিচিপ্পাস -প্লায়োহিপ্পাস -ইকুয়াস।
আজ থেকে প্রায় 6 কোটি বছর আগে পৃথিবীতে ঘোড়ার আদি পূর্বপুরুষ ইওহিপ্পাস বাস করত। এদের উচ্চতা ছিল 30 সেন্টিমিটার। এবং এর আকৃতি ছিল অনেকটা শিয়ালের মতো। এদের অগ্রপদে চারটি এবং পশ্চাৎপদে তিনটে করে আঙ্গুল ছিল, সব আঙুলগুলি ভূমি স্পর্শ করতো।
ইওহিপ্পাস থেকে ক্রমবিবর্তনের ফলে অলিগোসিন যুগের মেসোহিপ্পাসের সৃষ্টি হয়। যার উচ্চতা ছিল 60 সেমি এবং আকার অনেকটা ভেড়ার মতো। এদের উভয় পায়েই তিনটে করে আঙ্গুল ছিল এবং মাঝের আঙুল ছিল লম্বা ও মজবুত।
পরবর্তীকালে মেরিচিপ্পাসের সৃষ্টি হয়। যার উচ্চতা ছিল 100 সেমি। মেরিচিপ্পাসের 3 টি আঙ্গুলের মধ্যে মাঝের আঙুলটি কর্মক্ষম ছিল।
পরবর্তী পর্যায়ে মেরিচিপ্পাস থেকে এক আঙ্গুলযুক্ত ও শক্ত পা বিশিষ্ট প্লায়োহিপ্পাসের সৃষ্টি হয়। যার উচ্চতা প্রায় 120 সেমি।
প্লায়োহিপ্পাসের শেষ সংস্করণ হলো আধুনিক ঘোড়া ইকুয়াস যার উচ্চতা 150 সেমি এবং খুর যুক্ত এক আঙ্গুল বিশিষ্ট ঘোড়া।
উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রাপ্ত ঘোড়ার পূর্বপুরুষের জীবাশ্ম বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেন আত্ম রক্ষার তাগিদে দ্রুত দৌড়ানোর জন্য পায়ের আঙুলগুলি ধীরে ধীরে লুপ্ত হয় এবং আঙুলের দৈর্ঘ্যের ও প্রস্থের বৃদ্ধি ঘটে আধুনিক ঘোড়া ইকুয়াসের সৃষ্টি হয়।
23. সমসংস্থ অঙ্গ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর: জীবদেহের যে সকল অঙ্গের উৎপত্তি একই এবং গঠন কাঠামো একই প্রকার কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন কাজের সাথে যুক্ত থাকায় তাদের বাহ্যিক গঠনের আপাত ভিন্নতা দেখা যায়, তাদের সমসংস্থ অঙ্গ বলে।
উদাহরণ : মানুষের হাত,ঘোড়ার অগ্রপদ, তিমির ফ্লিপার, বাদুড়ের ডানা, পাখির ডানা ইত্যাদি।
24. সমবৃত্তীয় অঙ্গ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর: জীবদেহের যে সকল অঙ্গের উৎপত্তি ও গঠন কাঠামো আলাদা কিন্তু একই রকম কাজ করার জন্য অঙ্গ গুলির মধ্যে আপাত সাদৃশ্য দেখা যায় ,তাদের সমবৃত্তীয় অঙ্গ বলে।
উদাহরণ: পাখির ডানা, বাদুড়ের ডানা, পতঙ্গের ডানা।
25. সমসংস্থ অঙ্গ ও অভিব্যক্তির মধ্যে সম্পর্ক লেখ।
উত্তর: সমসংস্থ অঙ্গগুলি থেকে বোঝা যায় যে সংশ্লিষ্ট অঙ্গ তথা জীবগুলি উৎপত্তিগতভাবে এক। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশে অভিযোজিত হওয়ার ফলে বর্তমানে তাদের গঠন বিভিন্ন ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। তাই সমসংস্থ অঙ্গগুলি প্রকৃতপক্ষে অপসারী অভিব্যক্তিকে নির্দেশ করে।
26. সমবৃত্তীয় অঙ্গ ও অভিব্যক্তির মধ্যে সম্পর্ক কী?
উত্তর: সমবৃত্তীয় অঙ্গগুলির বিভিন্ন উদাহরণ থেকে বোঝা যায় যে বিভিন্ন জীবের অঙ্গ গুলির গঠন ও উৎপত্তিগত ভাবে আলাদা হলেও একই পরিবেশের প্রভাবে তারা একই রকম কাজ করার জন্য অভিযোজিত হয়, তাই সমবৃত্তীয় অঙ্গগুলি প্রকৃতপক্ষে অভিসারী অভিব্যক্তিকে নির্দেশ করে।
27. অভিসারী অভিব্যক্তি এবং অপসারী অভিব্যক্তি বলতে কী বোঝো?
উত্তর: অভিসারী অভিব্যক্তি: যে প্রকার অভিব্যক্তিতে দুটি ভিন্ন প্রজাতির জীব একই প্রাকৃতিক পরিবেশে অভিযোজনর জন্য বাহ্যিক গঠন ও কার্যগত ভাবে এক হয় তাকে অভিসারী অভিব্যক্তি বলে।
অপসারী অভিব্যক্তি: যে প্রকার অভিব্যক্তিতে কোন প্রজাতির জীব বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশে অভিযোজিত হওয়ার দরুন নতুন বৈশিষ্ট্যের আগমনের দ্বারা নতুন প্রজাতির সৃষ্টি করে তাকে অপসারী অভিব্যক্তি বলে।
28. নিষ্ক্রিয় অঙ্গ ও অভিব্যক্তির মধ্যে সম্পর্ক কী?
উত্তর: শুধুমাত্র অভিব্যক্তি দ্বারাই নিষ্ক্রিয় অঙ্গ গুলির উপস্থিতি ব্যাখ্যা করা সম্ভব। অভিব্যক্তির ধারণা থেকে বলা যায় যে লুপ্তপ্রায় অঙ্গ বহনকারী জীবটির উৎপত্তি ঘটেছে এমন উদবংশীয় জীব থেকে যার দেহে উক্ত অঙ্গটি সক্রিয় ছিল।
29. প্রোটোবায়োন্ট কাকে বলে?
উত্তর: আদি পৃথিবীতে পরিবেশের জলীয় দ্রবণ থেকে আলাদা হয়ে আদি জীবসদৃশ গঠন তৈরি হয়, যার মধ্যে নিজস্ব প্রজনন ক্ষমতা না থাকলেও অভ্যন্তরীণ রাসায়নিক পরিবেশে উপস্থিতি ছিল, তাকে প্রোটোবায়োন্ট বলে।
30. কোয়াসারভেটের গুরুত্ব লেখ।
উত্তর : প্রোটোপ্লাজমের কোলয়েড গঠনের সঙ্গে কোয়াসারভেটর কোলয়েড গঠনের মিল থাকায় কোয়াসারভেটকে আদি জীবের পূর্ব গঠন রূপে গণ্য করা হয়। ওপারিনের মতে- বিভিন্ন আকার যুক্ত জৈব যৌগের সমন্বয়ে গঠিত কোয়াসারভেট গুলির ওপর প্রাকৃতিক নির্বাচন ক্রিয়াশীল হওয়ার ফলেই এটি প্রাথমিক কোশের সৃষ্টি করেছিল।
দারুণ
উত্তরমুছুন