Breaking

বৃহস্পতিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২২

কোম্পানির শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও বিদ্রোহ (protest and rebellions against the rule of the company in Bengali)

 

                     কোম্পানির শাসনের                  বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও বিদ্রোহ


1. চুয়াড় বিদ্রোহের কারণ কী ছিল ?

উত্তর: ১৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দেওয়ানি লাভ করার পর জঙ্গলমহলে জোর করে রাজস্ব আদায় করলে চুয়াড় বিদ্রোহ হয়। ১৭৬৬ খ্রিস্টাব্দে চুয়াড় বিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল।


2. ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলনের উদ্দেশ্য কী ছিল?

উত্তর: ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল বিধর্মী ইংরেজ শাসিত ভারতকে  বা দার -উল - ইসলাম বা ধর্মরাজ্যে পরিণত করা। অবশ্য ধর্মীয় উদ্দেশ্যে শুরু হলেও পরবর্তীকালে এটি রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছিল।


3. তিতুমির কেন বিখ্যাত ?

উত্তর: বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ছিলেন তিতুমির। তিনি নিজেকে স্বাধীন বাদশাহো বলে ঘোষণা করেন। নারকেলবেড়িয়াতে বাঁশের কেল্লা তৈরি করে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।


4.  রানী লক্ষ্মীবাঈ স্মরণীয় কেন ?

উত্তর: ঝাঁসির রানী লক্ষ্মীবাঈ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহে ইংরেজদের বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ব্রিটিশ সরকার স্বত্ববিলোপ নীতি প্রয়োগ করে ঝাঁসি দখল করতে চাইলে লক্ষ্মীবাঈ বিদ্রোহ ঘোষণা করেন।


5. ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের ফল কী হয়েছিল?

উত্তর: ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের ফলে- ভারতে কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটেছিল। ভারত শাসন আইন পাস করে ভাইসরয়ের আইন পরিষদে ভারতীয় সদস্য গ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।


6. সাঁওতাল বিদ্রোহের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো।

উত্তর:  সাঁওতাল বিদ্রোহের গুরুত্ব : 


১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের পূর্ববর্তীকালে ভারতে সংঘটিত ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনগুলির মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিল আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায়ের বিদ্রোহ (১৮৫৫ খ্রি.)। আপাত ব্যর্থ হলেও এই বিদ্রোহের ঐতিহাসিক গুরুত্ব ছিল নিম্নরূপ-


(1) সরকার সাঁওতালদের জন্য ভাগলপুর ও বীরভূম জেলার কিছু অংশ নিয়ে সাঁওতাল পরগনা নামে একটি পৃথক অঞ্চল গঠন করে। সেই সঙ্গে এই অঞ্চলে সাঁওতালদের নিজস্ব আইন বলবৎ করা হয়।


(2) সাঁওতালদের অভাব-অভিযোগের প্রতি দৃষ্টি রাখার জন্য সরকারি কর্মচারীদের নির্দেশ দেওয়া হয়।


(3) এই বিদ্রোহ কৃষক তথা সাধারণ মানুষকে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রেরণা জোগায়। যা পরবর্তীকালে মহাবিদ্রোহের পথ প্রশস্ত করে।


(4) এই বিদ্রোহের ফলে জমিদারি ও মহাজনি শোষণ সাময়িকভাবে হ্রাস পেয়েছিল।


বিশিষ্ট লেখক সুপ্রকাশ রায় বলেছেন যে, সাঁওতালদের গণজাগরণ ভারতে ব্রিটিশ শাসনের ভিত্তিমূলে আঘাত করেছিল। ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদারও মনে করেন, ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের তুলনায় ১৮৫৫-র সাঁওতাল বিদ্রোহ কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। তিনি লিখেছেন—১৮৫৭-র বিদ্রোহকে যদি ভারতবাসীর স্বাধীনতা সংগ্রাম বলা হয়, তাহলে সাঁওতাল বিদ্রোহেরও সে মর্যাদা পাওয়া উচিত।


7. ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের ধর্মীয় কারণ কী ছিল ?

উত্তর:  ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের ধর্মীয় কারণ :


১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের পশ্চাতে ধর্মীয় কারণ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। 

 (1) খ্রিস্টান মিশনারিরা ভয় ও প্রলোভন দেখিয়ে ভারতীয়দের খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করতে বাধ্য করত। সরকারি দপ্তর, জেলখানা, বিদ্যালয় প্রভৃতি সমস্ত জায়গায় ছিল এদের অবাধ গতি। সরকার প্রকাশ্যেই এদের কাজে মদত দিত।


(2) হিন্দু ও ইসলাম ধর্মকে নানাভাবে বিদ্রুপ করে মিশনারিরা খ্রিস্টানধর্মের মহত্ত্ব প্রচার করত।


 (3) ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৫ আগস্ট সম্রাট বাহাদুর শাহ 'আজমগড় ঘোষণাপত্র জারি করেন। এই ঘোষণাপত্র সিপাহিদের উদ্বুদ্ধ করে। তারা মনে করে যে, ইংরেজ শাসন ধ্বংস হলে তারা ধর্মান্তরিত হওয়ার আশঙ্কা থেকে মুক্ত হবে।


(4) কোম্পানির পরিচালক সভার প্রধান ম্যাঙ্গেলস বলেছিলেন (১৮৫৭ খ্রি.), সমগ্র ভারতে খ্রিস্টের পতাকা উড্ডীন রাখতে হবে এবং ভারতকে একটি খ্রিস্টান দেশে পরিণত করার জন্য সর্বশক্তি প্রয়োগ করতে হবে। ধর্মভীরু ভারতবাসীর কাছে এই ধরনের ঘোষণা ছিল মৃত্যুদণ্ডের সমান।


 (5) বিদ্রোহীদের সম্পর্কে সি. বল বলেছেন যে, ধর্মরক্ষার তাগিদেই তাঁরা ইংরেজদের কোতল করতে নেমেছিলেন। অধিকাংশ পণ্ডিত ধর্মীয় ভীতি ও অসন্তোষকে মহাবিদ্রোহের অন্যতম  কারণ বলে মেনে নিয়েছেন।


8.  ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণগুলি উল্লেখ করো।

উত্তর : মহাবিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ :

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহ ভারতীয়দের মধ্যে প্রবল উৎসাহ উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছিল, কিন্তু এক বছরের মধ্যেই বিদ্রোহ দমিত হয়েছিল। এই বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণগুলি হল-

(1) ভারতের সব অঞ্চলের সিপাহি এবং জনগণ বিদ্রোহে যোগদান করেনি।


(2) বিদ্রোহী নেতাদের মধ্যে সংহতির অভাব ছিল। তারা সংঘবদ্ধভাবে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে আন্দোলন করেনি। 

(3) শিখ, গুর্খা, রাজপুত, মারাঠা প্রভৃতি জাতি এবং আফগানিস্তান, কাশ্মীর, হায়দ্রাবাদ প্রভৃতি রাজ্য বিদ্রোহ দমন করতে ইংরেজদের সাহায্য করেছিল।


(4) ভারতীয় রাজারাও অনেকে বিদ্রোহ দমনে সাহায্য করেন।


(5) বিদ্রোহীদের ব্যর্থতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল অস্ত্র, অর্থ ও দক্ষতার অভাব। বিদ্রোহীদের দক্ষতার তুলনায় আবেগ ছিল বেশি। তা ছাড়া তাদের লড়াই করতে হচ্ছিল অর্থে ও অস্ত্রে বলীয়ান ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে, ফলে তাদের পরাজয় স্বাভাবিক ছিল।


(5) এইচ. টি. ল্যামব্রিক বলেছেন, বিদ্রোহীদের সেনাবাহিনী ইউরোপীয় সেনাবাহিনী তথা রণকৌশলকে অন্ধভাবে অনুকরণ করত। এটি ছিল বিদ্রোহীদের অসম্ভব দুর্বলতা যা ইংরেজবাহিনীকে রণক্ষেত্রে সুবিধাজনক ও অনুকূল পরিস্থিতিতে দাঁড় করিয়েছিল।


9. ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণ ও গুরুত্ব আলোচনা করো।

উত্তর : সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণ: 

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের পূর্বে সংগঠিত প্রতিবাদী আন্দোলনগুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল সাঁওতাল উপজাতির অভ্যুত্থান (১৮৫৫ খ্রি.)। এই অভ্যুত্থানের পেছনে ছিল বহুদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ।


1.রাজস্বের চাপ:  ভারতের প্রাচীনতম আদিবাসী সাঁওতালরা স্বভাবগতভাবে সৎ, পরিশ্রমী ও সাহসী। কর্নওয়ালিস চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন করলে বহু সাঁওতাল বাস্তুচ্যুত হয়। তারা রাজমহলের পার্বত্য অঞ্চলে এসে নতুন বাসা বাঁধে এবং রুক্ষ মাটিকে কৃষিকাজের উপযুক্ত করে জীবনধারণ করতে থাকে। এই অঞ্চল 'দামিন-ই-কোহ' নামে পরিচিত হয়। কিন্তু কিছুদিন পরে সরকার এই অঞ্চলকেও জমিদারি বন্দোবস্ত ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত করে। ফলে আবার সাঁওতালদের ওপর রাজস্বের বোঝা চাপে। এতে তারা ক্ষুর ও বিদ্রোহমুখী হয়।


2. মহাজনি শোষণ:  কালক্রমে দামিন-ই-কোহ-তে মহাজনদের আবির্ভাব ঘটে। এইসব ধূর্ত ও অর্থলোভী ব্যবসায়ী, মহাজনরা সহজসরল সাঁওতালদের শোষণ করতে শুরু করে। ঋণের জালে সাঁওতালদের জড়িয়ে তারা মুনাফা লুটতে থাকে। রাজস্ব প্রদান এবং খাদ্যাভাব মেটাতে বহু সাঁওতাল পরিবার ঋণ নিতে বাধ্য হয়। চড়া সুদের বিনিময়ে এই ঋণ নেওয়ার ফলে তারা আরও বিপদে পড়ে। বহু সাঁওতাল ঋণ শোধ করতে ব্যর্থ হয়ে তাদের শেষ সম্বল কৃষিজমিটুকু মহাজনদের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হয়। একবার ঋণ নিলে সেই ঋণ শোধ করতে হত বংশপরম্পরায়। এই জাল থেকে মুক্তির আশায় তারা বিদ্রোহী হয়।


3 .নীলকরদের শোষণ:  সাঁওতালদের ক্ষোভের আর-একটি কারণ ছিল নীলকর সাহেবদের শোষণ ও অত্যাচার। নীলচাষ করার ফলে ওই অঞ্চলে খাদ্যাভাব ঘটে। আবার নীলচাষ করতে অস্বীকার করলে নীলকর সাহেবরা নিরীহ সাঁওতালদের ওপর অকথ্য অত্যাচার করত। এই অত্যাচার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সাঁওতালরা বিদ্রোহের পথ বেছে নেয়।


4.সরকারি কর্মচারীদের অত্যাচার: সরকারি প্রশাসন ও বিচারবিভাগ অন্যায়ভাবে জমিদার,মহাজন ও ব্যবসায়ীদের সমর্থন করে। উপজাতিভুক্ত সাঁওতালদের 'সভ্যতার লজ্জা' মনে করে উদ্ধৃত ইংরেজ কর্মচারীরাও সাঁওতালদের ওপর অত্যাচার চালাতে থাকে। নিরীহ সাঁওতাল উপজাতি দেশের বিচারবিভাগের কাছ থেকেও কোনো সাহায্য পায়নি। এই সার্বিক শোষণ ও অত্যাচার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তারা শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহের পথই বেছে নেয়।


5.রেল-কর্মচারীদের অত্যাচার: আঠারো শতকে তিলা পাহাড়, ভাগলপুর অঞ্চলে রেললাইন। পাতার কাজ শুরু হয়। এই কারণে বহু রেল-কর্মচারী 'দামিন-ই-কোহ’-তে আসে। তারা সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে দরিদ্র সাঁওতালদের কাছ থেকে অল্পমূল্যে বা বিনামূল্যে হাঁস, মুরগি, ছাগল, ফলমূল নিতে শুরু করে, এমনকি সাঁওতাল রমণীদের প্রতিও তারা অসভ্য আচরণ করে। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে সাঁওতাল সমাজ ভদ্রলোক-বিরোধী বা দিকু-বিরোধী আন্দোলন শুরু করে।


6. সিধু ও কানহুর নেতৃত্ব: জমিদার, মহাজন ও ইংরেজের অত্যাচারের প্রতিবাদে সাঁওতালরা সংঘবদ্ধ হয়। সাঁওতালদের সংগঠিত করার কাজে মুখ্য ভূমিকা নেন সিধু ও কানহু নামে দুই ভাই। তারা দুজনেই ছিলেন সাহসী ও দৃঢ় চরিত্রের মানুষ। সাঁওতাল ও অন্যান্য উপজাতির মানুষকে সংগঠিত করার জন্য সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে শালগাছের ডাল' পাঠানো হয়। ১৮৫৫-এর ৩০ জুন প্রায় দশ হাজার সাঁওতাল উগনাডিহি-র মাঠে মিলিত হয়। সিধু-কানহুর নেতৃত্বে ক্ষিপ্ত সাঁওতালরা পাঁচকাঠিয়া বাজারে উপস্থিত হয়। পাঁচজন স্থানীয় মহাজন ও দিঘী থানার অত্যাচারী দারোগাকে হত্যা করে সাঁওতাল বিদ্রোহের সূচনা হয়।

শত শত সাঁওতাল যুবক তীর-ধনুক নিয়ে বিদ্রোহে ঝাঁপিয়ে পড়ে। রাজমহল থেকে মুর্শিদাবাদ পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলে দ্রুত বিদ্রোহের আগুন ছড়িয়ে পড়ে। সরকার বিদ্রোহী  সাঁওতালদের দমন করতে সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেয়। ইংরেজ বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারায় হাজার হাজার সাঁওতাল। সিধু কানহুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বহু বন্দী সাঁওতালকে ফাঁসি দেয়া হয়।


সাঁওতাল বিদ্রোহের গুরুত্ব: ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের পূর্ববর্তীকালে ভারতে সংঘটিত ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন গুলির মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিল আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায়ের বিদ্রোহ। আপাত ব্যর্থ হলেও এই বিদ্রোহের ঐতিহাসিক গুরুত্ব ছিল নিম্নরূপ-

1. সরকার সাঁওতালদের জন্য ভাগলপুর বীরভূম জেলার কিছু অংশ নিয়ে সাঁওতাল পরগনা নামে একটি পৃথক অঞ্চল গঠন করে। সেই সঙ্গে এই অঞ্চলে সাঁওতালদের নিজস্ব আইন বলবৎ করা হয়।

2. সাঁওতালদের অভাব-অভিযোগের প্রতি দৃষ্টি রাখার জন্য সরকারি কর্মচারীদের নির্দেশ দেওয়া হয়।

3. এই বিদ্রোহ কি সত্য তা সাধারণ মানুষকে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রেরণা জোগায়, যা পরবর্তীকালে মহাবিদ্রোহের পথ প্রশস্ত করে।

4. এই বিদ্রোহের ফলে জমিদারি ও মহাজনি শোষণ সাময়িকভাবে হ্রাস পেয়েছিল।


10. তিতুমিরের আন্দোলনের প্রকৃতি কী ছিল?

উত্তর: তিতুমিরের বিদ্রোহ নিছক ধর্মীয় এবং সাম্প্রদায়িক বিদ্রোহ অথবা কৃষকবিদ্রোহ ও ইংরেজের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রাম ছিল কি না তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ আছে। কেউ কেউ এটিকে বিশুদ্ধ সাম্প্রদায়িক আন্দোলন বলেছেন। আবার কারও মতে এটি ছিল কৃষকদের শোষণমুক্তির আন্দোলন।


(1) রমেশচন্দ্র মজুমদার একে মুসলিমদের জন্য, মুসলিমদের দ্বারা, মুসলিম কর্তৃক আন্দোলন বলে উল্লেখ করেছেন।


(2) অভিজিৎ দত্ত বলেছেন যে, বারাসত বিদ্রোহ ছিল সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং ধর্মীয় ভাবধারার সমান্তরাল আন্দোলন।


(3) থনটন , হান্টার প্রভৃতি লেখকের মতে, এই আন্দোলন সাম্প্রদায়িক ছিল না। কারণ ওয়াহাবিরা মুসলিম জমিদারদেরও আক্রমণ করেছিল, আবার নিম্নবর্ণের হিন্দুদের ওপর তারা কোনোরকম অত্যাচার করেনি।


(4) নরহরি কবিরাজ এই আন্দোলনকে কৃষকদের শ্রেণিসংগ্রাম বলে বর্ণনা করেছেন। কারণ তিতুমিরের বিদ্রোহ ছিল জমিদার ও নীলকরদের বিরুদ্ধে।


(5) তিতু নিজেকে 'বাদশাহ' বলে ঘোষণা করলে ইংরেজের সঙ্গেও তাঁর বিরোধ বাধে। এইদিক থেকে বিচার করলে ওয়াহাবিদের সংগ্রামকে স্বাধীনতা সংগ্রামও বলা যায়।


11. ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের অর্থনৈতিক ও সামরিক কারণ উল্লেখ করো।

উত্তর : মহাবিদ্রোহের অর্থনৈতিক কারণ : 

জনগণের ক্ষোভের সবচেয়ে বড়ো কারণ ছিল ইংরেজদের অর্থনৈতিক শোষণ। কৃষক, শ্রমিক, কারিগর, জোতদার, জমিদার কেউ রেহাই পায়নি এই শোষণ থেকে।

(1) পলাশির যুদ্ধের পর শুরু হয় ইংরেজের নির্লজ্জ লুণ্ঠন। ভারতবর্ষ থেকে প্রভূত সোনা, রুপা ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু তারা ইংল্যান্ডে নিয়ে যায়।

(2) চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কৃষকশ্রেণির দুঃখ-দুর্দশা চরমে নিয়ে যায়। অতিরিক্ত রাজস্বের চাপ এবং রাজস্ব আদায়কারীদের নিপীড়ন তাদের জীবন দুর্বিষহ করে তোলে। একদিকে জমিদার ও

অন্যদিকে মহাজনদের নিষ্পেষণে তারা জর্জরিত হয়।

(3) কৃষকশ্রেণির পাশাপাশি শিল্পী ও কারিগররাও সর্বনাশের মুখে এসে দাঁড়ায়। ইংল্যান্ডের কলে তৈরি কাপড়ের সঙ্গে ভারতের তাঁতে তৈরি কাপড়ের অসম প্রতিযোগিতায় পিছু হটে ভারতীয়।দ্রব্য। ফলে ভারতের সমৃদ্ধ তাঁতশিল্প ধ্বংস হয়।


(4) ইংল্যান্ড থেকে প্রেরিত দ্রব্যের আমদানিশুল্ক কমিয়ে এবং ভারতীয় দ্রব্যের রপ্তানিশুল্ক বাড়িয়ে তারা ভারতীয় দ্রব্যের ব্যাবসা প্রায় বন্ধ করে দেয়।


মহাবিদ্রোহের সামরিক কারণ: ভারতীয় সিপাহীদের অসন্তোষ ছিল মহা বিদ্রোহের অন্যতম কারণ। সমসাময়িক একজন ইংরেজ লিখেছেন-ভারতীয় সিপাহি ও ব্রিটিশ কর্মচারীর মধ্যে কোনো বন্ধুত্ব  বা সহমর্মিতাবোধ ছিল না দু'দলই যেন ছিল পরস্পরের বিচ্ছিন্নন ও অপরিচিত।

1. বিভিন্ন সময়ে সরকারের কিছু কিছু নির্দেশ ধর্মভীরু সিপাহীদের শংকিত করেছিল। ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে হিন্দুদের তিলক কাটা ও মুসলমানদের দাড়ি রাখার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি এবং ১৮২৪ - সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ব্রম্ভ যুদ্ধে যাওয়ার নির্দেশও সিপাহীদের ধর্মবিশ্বাসে আঘাত করে। কারণ সেই সময় সমুদ্রযাত্রা হিন্দু ধর্মে নিষিদ্ধ ছিল।

2. চাকুরী সংক্রান্ত কিছু নির্দেশ সিপাহীদের বিদ্রোহীমুখী  করেছিল ।১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে জেনারেল সার্ভিস এনলিস্টমেন্ট আইন জারি করে ভারতের মধ্যে বাইরে যে কোনো স্থানে সিপাহীদের যুদ্ধে যাওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়। এই আইন সিপাহীদের দারুন ক্ষুব্দ করে।

3. ইংরেজ সৈনিকের তুলনায় সিপাহীদের বেতন ছিল কম। সম যোগ্যতা থাকলেও ভারতীয়দের পদোন্নতির সুযোগ ছিল না। ইংরেজ সৈনিকের তুলনায় তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল নিকৃষ্ট। অধিকাংশ সময়ই সিপাহীদের শুয়োর, নিগার ইত্যাদি গালিগালাজ দিয়ে কথা বলা হত। এই হীনতার বোঝা বহন করা একসময় ভারতীয় সিপাহীদের কাছে দুঃসহ হয়ে ওঠে।








কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন