Breaking

সোমবার, ৪ এপ্রিল, ২০২২

নবম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞান চতুর্থ অধ্যায়- পরমাণুর গঠন (Atomic structure in Bengali Class-9)

 

                      নবম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞান

                         পরমাণুর গঠন

                  চতুর্থ অধ্যায় প্রশ্ন ও উত্তর

Atomic structure
Atomic structure



1. পরমাণু কাকে বলে? পরমাণুর জনক কে?

পরমাণু: মৌলিক পদার্থের যে ক্ষুদ্রতম কণার মধ্যে মৌলটির সব ধর্ম বর্তমান থাকে এবং যে কণা রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে, তাকে পরমাণুু বলে।

* পরমাণুর জনক হলেন জন ডালটন।


2. পরমাণুর মূল উপাদান গুলি কী কী ?


পরমাণু তিনটি মূল কণিকা দ্বারা গঠিত। যথা-

1.ঋণাত্মক তড়িদগ্রস্ত কণা ইলেকট্রন

2. ধনাত্মক তড়িদগ্রস্ত কণা প্রোটন

3. নিস্তড়িৎ কণা নিউট্রন


3. ক্যাথোড রশ্মি কী?

ক্যাথোড রশ্মি হল নির্দিষ্ট ভরবিশিষ্ট দ্রুতগামী ঋণাত্মক আধানযুক্ত একপ্রকার অতিক্ষুদ্র কণার স্রোত। এই অতিক্ষুদ্র কণাগুলির নাম হল ইলেকট্রন


4. ক্যাথোড রশ্মির বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ।

ক্যাথোড রশ্মির বৈশিষ্ট্য : 

1. এই রশ্মি ক্যাথোডের তল থেকে লম্বভাবে বেরিয়ে আসে।

2. এই রশ্মির গতিপথে কোনো অস্বচ্ছ বস্তু এলে সেটির ছায়া সৃষ্টি হয়।

3. অস্বচ্ছ বস্তুর বদলে একটা পাখাযুক্ত হালকা চাকা রাখলে চাকাটি ঘুরতে থাকে।

4. ক্যাথোড রশ্মি কোনো শক্ত ধাতব পদার্থকে আঘাত করলে X রশ্মির সৃষ্টি হয়।


5. দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত হয় এরকম দুটি ক্যাথোড রশ্মি নলের নাম লেখ।

দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত হয় এরকম দুটি ক্যাথোড রশ্মি নলের নাম হল টিভির পিকচার টিউব, ফ্লুরোসেন্ট টিউব।


6. কোন বিজ্ঞানী তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কার করেন? এর থেকে কোন কোন রশ্মি বের হয়?

বিজ্ঞানী হেনরি বেকারেল তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কার করেন।

* তেজস্ক্রিয় পদার্থ থেকে তিন প্রকার রশ্মি বের হয়- আলফা রশ্মি, বিটা রশ্মি, গামা রশ্মি।


7. কয়েকটি তেজস্ক্রিয় পদার্থের নাম লেখ।

কয়েকটি তেজস্ক্রিয় পদার্থের নাম হল- ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম, প্লুটোনিয়াম, রেডিয়াম।


8. পরমাণুর ব্যাস কত সেমি?

পরমাণুর ব্যাস 10^-8 সেমি।


9. পরমাণুর নিউক্লিয়াসের ব্যাস কত সেমি?

পরমাণুর নিউক্লিয়াসের ব্যাস 10^-12 থেকে 10^-13 সেমি।


10. হাইড্রোজেন পরমাণুর ব্যাস কত?

হাইড্রোজেন পরমাণুর ব্যাস 0.1 ন্যানোমিটার।


11. পরমাণুর ব্যাস কোন এককে মাপা হয়?

পরমাণুর ব্যাস ফার্মি এককে মাপা হয়।


12. পরমাণুর নিউক্লিয়াস কাকে বলে?

প্রত্যেক পরমাণুর সমস্ত ধনাত্মক আধান এবং ভর পরমাণুর কেন্দ্রে অতিক্ষুদ্র স্থান জুড়ে অবস্থান করে। একটি পরমাণুর নিউক্লিয়াস বা কেন্দ্রক বলে।


13. পরমাণুর নিউক্লিয়াস কে আবিষ্কার করেন?

পরমাণুর নিউক্লিয়াস আবিষ্কার করেন- আর্নেস্ট রাদারফোর্ড।


14. পরমাণুর কেন্দ্রকে কী কী কণা থাকে?

পরমাণুর কেন্দ্রকে নিউট্রন এবং প্রোটন থাকে।


15. নিউট্রনবিহীন একটি পরমাণুর নাম লেখ।

নিউট্রনবিহীন একটি পরমাণুর নাম হল সাধারণ হাইড্রোজেন।


16. পরমাণুর সবচেয়ে ভারী এবং সবচেয়ে হালকা কণা কোনটি?

পরমাণুর সবচেয়ে ভারী কনা হলো নিউট্রন এবং সবচেয়ে হালকা কণা হল ইলেকট্রন


17. ইলেকট্রন ,প্রোটন ও নিউট্রন কণা কে আবিষ্কার করেন?

ইলেকট্রন আবিষ্কার করেন জে.জে. থমসন।

প্রোটন আবিষ্কার করেন রাদারফোর্ড

নিউট্রন আবিষ্কার করেন জেমস স্যাডউইক।


18. নিউক্লিয়ন কী?

পরমাণুর নিউক্লিয়াস সাধারণত প্রোটন ও নিউট্রন কণা দ্বারা গঠিত। এদের একত্রে নিউক্লিয়ন বলে।


19. নিউক্লিয় বল কী?

নিউক্লিয়াসের মধ্যে প্রোটন ও নিউট্রনের প্রতিনিয়ত পারস্পরিক রূপান্তর ঘটে। এই রূপান্তরের ফলে কণাগুলির মধ্যে একটি তীব্র আকর্ষণজনিত বলের উদ্ভব হয়। এই আকর্ষণ বলকে নিউক্লিয় বল বলে।



20. কোনো মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা বা পরমাণু ক্রমাঙ্ক কাকে বলে?

কোনো মৌলের পরমাণুর নিউক্লিয়াসে যতগুলি প্রোটন থাকে, সেই সংখ্যাকে ওই মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা বা পরমাণু ক্রমাঙ্ক বলে।

* পারমাণবিক সংখ্যাকে Z অক্ষর দিয়ে প্রকাশ করা হয়



21. কোনো মৌলের ভরসংখ্যা বলতে কী বোঝো ?

কোন মৌলের পরমাণুর নিউক্লিয়াসে উপস্থিত প্রোটন এবং নিউট্রনের মোট সংখ্যাকে ওই মৌলের বা পরমাণুর ভরসংখ্যা বলে।

* ভরসংখ্যাকে A অক্ষর দিয়ে প্রকাশ করা হয়।



22. পরমাণু তড়িৎ নিরপেক্ষ কেন?

পরমাণুর নিউক্লিয়াসে উপস্থিত প্রোটন সংখ্যা বাইরের বিভিন্ন কক্ষপথে আবর্তশীল মোট ইলেকট্রন সংখ্যার সমান। আবার, একটি প্রোটনে যে পরিমাণ ধনাত্মক আধান থাকে, একটি ইলেকট্রনের ঋণাত্মক আধানের পরিমাণ ঠিক তার সমান হয়। অর্থাৎ, পরমাণুতে মোট ধনাত্মক আধানের পরিমাণ মোট ঋণাত্মক  আধানের পরিমাণ এর সমান। তাই ,পরমাণুর তড়িৎ নিরপেক্ষ হয়।


23. আইসোটোপ বা সমস্থানিক কাকে বলে?

একই মৌলের বিভিন্ন পরমাণু যাদের পারমাণবিক সংখ্যা একই কিন্তু নিউক্লিয়াসে নিউট্রন সংখ্যার ভিন্নতার জন্য যাদের পারমাণবিক ভর অর্থাৎ ভরসংখ্যা পৃথক হয়, তাদের পরস্পরের আইসোটোপ বা সমস্থানিক বলে।


24. আইসোটোপের ধর্ম বা বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ।

আইসোটোপের ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য : 

1. কোন মৌলের আইসোটোপগুলির পারমানবিক সংখ্যা সমান কিন্তু ভরসংখ্যা বিভিন্ন।

2. আইসোটোপগুলির যোজ্যতা সমান।

3. আইসোটোপগুলি পর্যায় সারণিতে একই অবস্থানে থাকে।

4. আইসোটোপগুলির অনেক ভৌত ধর্ম যেমন-ভর, ঘনত্ব, গলনাংক, স্ফুটনাংক ইত্যাদি আলাদা হলেও রাসায়নিক ধর্ম একই।


25. আইসোটোপের ব্যবহার লেখ।

আইসোটোপের ব্যবহার :

1. চিকিৎসাবিজ্ঞানে ক্যান্সার ও টিউমারের চিকিৎসায় তেজস্ক্রিয় আয়োডিন আইসোটোপ ব্যবহার করা হয়।

2. কৃষিক্ষেত্রে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ ব্যবহার করে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও রোগ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়।

3. তেজস্ক্রিয় কার্বন আইসোটোপের  সাহায্যে পৃথিবীর বয়স, বিভিন্ন পাথর, গাছ ইত্যাদির বয়স নির্ণয় করা যায়।

4. কোবাল্ট আইসোটোপের সাহায্যে ক্যান্সার কোশ ধ্বংস করা হয়।


26. আইসোবার কাকে বলে?

যেসব মৌলের পরমাণুর ভরসংখ্যা সমান কিন্তু পারমাণবিক সংখ্যা আলাদা ,তাদের পরস্পরের আইসোবার বলে।


 27. আইসোটোন কাকে বলে ?

যে সব মৌলের পরমাণুর নিউক্লিয়াসে নিউট্রন সংখ্যা সমান ,কিন্তু প্রোটন সংখ্যা আলাদা তাদের পরস্পরের আইসোটোন বলে।


28. আইসোটোপ নেই এমন দুটি মৌলের নাম লেখ।

আইসোটোপ নেই এমন দুটি মৌলের নাম হলো সোডিয়াম ও ফ্লুরিন।


29. ভারী জলের মধ্যে হাইড্রোজেনের কোন আইসোটোপ থাকে?

ভারী জলের মধ্যে হাইড্রোজেনের ডয়টেরিয়াম আইসোটোপ থাকে।


30. কোন পরমাণুতে কেন্দ্রকীয় কনাগুলিকে একত্রে ধরে রেখেছে কোন বল?

নিউক্লিয় বল।


31. নিউক্লিয় বল সৃষ্টিকারী কণিকার নাম কী?

নিউক্লিয় বল সৃষ্টিকারী কণিকার নাম হল মেসন কণা।


32. পরমাণুর মৌলিকত্ব কিসের উপর নির্ভর করে?

পরমাণুর মৌলিকত্ব পারমাণবিক সংখ্যা অর্থাৎ নিউক্লিয়াসে উপস্থিত প্রোটন সংখ্যার ওপর নির্ভর করে।


33. যোজ্যতা ইলেকট্রন কাকে বলে?

পরমাণুর সবচেয়ে বাইরের কক্ষের যে সমস্ত ইলেকট্রন রাসায়নিক মিলনে অংশ নেয়, তাদের যোজ্যতা ইলেকট্রন বলে।


34. আয়ন ও পরমাণুর মধ্যে কোনটি অধিক সুস্থিত এবং কেন ?

আয়ন ও পরমাণুর মধ্যে আয়ন বেশি সুস্থিত।কোনো মৌলের পরমাণু যখন ইলেকট্রন গ্রহণ বা বর্জনের দ্বারা আয়নে পরিণত হয় তখন আয়নটি নিষ্ক্রিয় মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাস লাভ করে।  তাই আয়নটি সুস্থিত হয়।


35. যোজ্যতার নির্ণয়ের নিয়মগুলি লেখ।

কোন মৌলের পরমাণুর নিউক্লিয়াসের বাইরের কক্ষপথে যতগুলি ইলেকট্রন থাকে সেটি ওই মৌলের যোজ্যতা। ব্যতিক্রম, কোন মৌলের নিউক্লিয়াসের বাইরের কক্ষপথে ইলেকট্রন সংখ্যা 4 এর বেশি হয়, তখন 8 থেকে তা বিয়োগ করতে হয়। এই বিয়োগফলটাই হলো ওই মৌলের যোজ্যতা।


36. মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা সবসময় পূর্ণ সংখ্যা হয় কেন?

নিউক্লিয়াসে উপস্থিত প্রোটন সংখ্যা কখনও ভগ্নাংশ হতে পারে না, সর্বদা পূর্ণসংখ্যা হয়। আবার নিউক্লিয়াসে উপস্থিত প্রোটন সংখ্যাই মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা।কাজেই পারমাণবিক সংখ্যা সর্বদা পূর্ণসংখ্যা হয়।


37. আলফা কণা বিচ্ছুরণ পরীক্ষা দ্বারা কোন গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার সম্ভব হয়েছিল?

আলফা কণা বিচ্ছুরণ পরীক্ষা দ্বারা পরমাণুর মধ্যে নিউক্লিয়াসের অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হয়েছিল।


38.  রাদারফোর্ডের মডেলকে গ্রহগত পরমাণু মডেল বলা হয় কেন?

সৌরজগতে সূর্যকে কেন্দ্র করে গ্রহগুলি বিভিন্ন কক্ষপথে পরিক্রমণ করে, তেমনি রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলে অনুযায়ী, নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে ইলেকট্রনগুলি আবর্তন করে। তাই রাদারফোর্ডের মডেলকে গ্রহগত পরমাণু মডেল বলে।


39. রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলের ত্রুটি লেখ

রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলের ত্রুটি: 

1. ম্যাক্সওয়েলের তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গের তত্ত্ব অনুযায়ী,ধনাত্মক আধানযুক্ত নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে ঋণাত্মক আধানযুক্ত ইলেকট্রন কণা বৃত্তাকার কক্ষপথে ,সমগতিতে ঘুরতে থাকলে তা নিরবিচ্ছিন্নভাবে শক্তি বিকিরণ করতে থাকবে। এর ফলে ইলেকট্রনটি ক্রমহ্রাসমান ব্যাসার্ধের কুণ্ডলীপথে আবর্তিত হতে হতে ক্রমশ নিউক্লিয়াসের দিকে এগিয়ে যাবে এবং নিউক্লিয়াসের ওপর আছড়ে পড়বে। অর্থাৎ এই মডেল অনুযায়ী পরমাণু স্থায়ী হতে পারে না।

2. ঘূর্ণায়মান ইলেকট্রন নিরবিচ্ছিন্নভাবে শক্তি বিকিরণ করলে পরমাণুর নিরবিচ্ছিন্ন বর্ণালী পাওয়ার কথা, কিন্তু বাস্তবে রেখা বর্ণালী পাওয়া যায়।


40. থমসনের পরমাণু মডেলের স্বীকার্যগুলি লেখ

থমসনের পরমাণু মডেলের স্বীকার্য:

1. পরমাণু প্রকৃতপক্ষে প্রায় 10^-10 m ব্যাসার্ধ বিশিষ্ট একটি ধনাত্মক তড়িদাহিত সুষম গোলক।

2. এই গোলকের মধ্যে ঋণাত্মক আধানবিশিষ্ট ইলেকট্রনগুলি ক্ষুদ্র কণার আকারে এমন সুষমভাবে ছড়ানো থাকে, যাতে সমগ্র ধনাত্মক আধান পরস্পর প্রশমিত হয়।পুডিং এর ভিতরে যেমন কিশমিশ ঢাকা থাকে বা তরমুজের মধ্যে বীজগুলি যেভাবে সাজানো থাকে, ঠিক সেভাবেই ইলেকট্রনগুলি পরমাণুতে সাজানো থাকে। তাই একে পাম পুডিং মডেল বা ওয়াটারমেলন মডেল বলা হয়।










কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন