জাতিসংঘ এবং সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ
1. লিগ পরিষদ কিভাবে গঠিত হয় ?
উত্তর : লিগ পরিষদ গঠিত হয়েছিল ৫ টি স্থায়ী ও ৪ টি অস্থায়ী মোট ৯ টি সদস্য নিয়ে। ইংল্যান্ড ,ফ্রান্স ,ইতালি ,জাপান স্থায়ী সদস্য হিসেবে যোগদান করলেও আমেরিকা যোগ দেয়নি। পরে সোভিয়েত রাশিয়া ও জার্মানি স্থায়ী সদস্য হিসেবে যোগদান করলে স্থায়ী সদস্য সংখ্যা হয় ৬ এবং অস্থায়ী সদস্য হয় ৯।
2. লন্ডন ঘোষণাপত্র বলতে কী বোঝো?
উত্তর: ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে লন্ডন শহরে কানাডা ,নিউজিল্যান্ড ,অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধিগণ মিলিত হয়ে একটি ঘোষণাপত্রের দ্বারা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য একটি প্রতিষ্ঠান গঠনের প্রস্তাব জানান । এই ঘোষণাপত্রই লন্ডন ঘোষণাপত্র নামে পরিচিত।
3. লন্ডন ঘোষণাপত্রের গুরুত্ব কী ?
উত্তর: ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে ইংল্যান্ড ,অস্ট্রেলিয়া ,নিউজিল্যান্ড, কানাডা ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধিগণ লন্ডনে এক ঘোষণাপত্রের দ্বারা বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা গঠনের প্রস্তাব দেন। অর্থাৎ এই ঘোষণাপত্রকেই সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ গঠনের প্রথম পদক্ষেপ বলে মনে করা যায়। তাই এর গুরুত্ব অপরিসীম।
4. সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সনদ সদস্য বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: যেসকল রাস্ট্র ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সনদে প্রথম স্বাক্ষর করেছিল, তাদের সনদ সদস্য বলা হয়।১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুন সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সনদে ৫১ টি দেশ প্রথম স্বাক্ষর করে। এই ৫১ টি দেশ হলো সনদ সদস্য ভুক্ত দেশ।
5. জাতিপুঞ্জের উদ্দেশ্য গুলি কী?
উত্তর: সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের উদ্দেশ্য গুলি হল-
1. যুদ্ধ মুক্ত করে তোলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা।
2. শান্তিভঙ্গকারী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং সব সদস্য রাষ্ট্রের দ্বারা প্রত্যেক রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও শান্তি সুনিশ্চিত করার জন্য ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা।
3. আন্তর্জাতিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আন্তর্জাতিক আইন ও ন্যায়নীতি অনুসরণ করা।
4. বিভিন্ন জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার মেনে বিভিন্ন দেশের মধ্যে সৌহার্দ্য স্থাপনের পথ পরিষ্কার করা।
5. পৃথিবীর মানবজাতির অর্থনৈতিক,সামাজিক প্রভৃতি বিভিন্ন মানবিক সমস্যাবলির সমাধান করা।
6. বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা।
7. সকল ধর্মাবলম্বীরা ভাষাভাষীর মানুষকে সম্মান মর্যাদা দান করা।
6. নিরাপত্তা পরিষদ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : নিরাপত্তা পরিষদ হল সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ শক্তিশালী সংস্থা। ৫ টি স্থায়ী ও ৬ টি অস্থায়ী অর্থাৎ মোট ১১ টি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদ গঠিত হয়েছিল। ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য ৬ থেকে বাড়িয়ে ১০ করা হয়। বর্তমানে নিরাপত্তা পরিষদের মোট সদস্য সংখ্যা ১৫। অস্থায়ী সদস্যরা ২ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়।
7. সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের নীতি গুলি কী?
উত্তর : সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সনদের ২ নম্বর ধারায় জাতিপুঞ্জের নীতিগুলি লিপিবদ্ধ রয়েছে। নীতিগুলি হল-
1. জাতিপুঞ্জের সদস্য রাষ্ট্রগুলির সমান সার্বভৌম মর্যাদা।
2. শান্তিপূর্ণ উপায়ে আন্তর্জাতিক বিরোধের সমাধান।
3. জাতিপুঞ্জ কোন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না ইত্যাদি।
8. সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের প্রধান সংস্থা কয়টি ও কী কী?
উত্তর: সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের প্রধান সংস্থা ছয়টি।
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের প্রধান সংস্থাগুলি হল-
1. সাধারণ সভা।
2. নিরাপত্তা পরিষদ।
3. অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ।
4. অছি পরিষদ।
5. আন্তর্জাতিক বিচারালয়।
6. মহাসচিব ও সচিবালয়।
9. সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সাধারণ সভা কীভাবে গঠিত হয় ?
উত্তর: সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সকল সদস্যকে নিয়ে সাধারণ সভা গঠিত হয়। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে ৫১ টি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে সাধারণ সভা গঠিত হয়েছিল। বর্তমানে সাধারণ সভার সদস্য রাষ্ট্র সংখ্যা ১৯৩। প্রত্যেক সদস্য রাষ্ট্র সাধারণ সভায় ৫ জন করে প্রতিনিধি পাঠাতে পারে। তবে ভোট দেয়ার সময় প্রত্যেক রাষ্ট্র একটিমাত্র ভোট প্রদানের অধিকারী।
10. জাতিপুঞ্জের কোন রাষ্ট্রের সদস্যপদ লাভের পদ্ধতি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: জাতিপুঞ্জ বা রাষ্ট্রসঙ্ঘের সনদের ৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী জাতিপুঞ্জের নিয়ম কানুন মানতে বদ্ধপরিকর কোন রাষ্ট্র সদস্যপদ গ্রহণের আবেদন জানালে তা নিরাপত্তা পরিষদে পাঠানো হয়- এই পরিষদের সুপারিশের ভিত্তিতে সাধারণ সভার ২/৩ অংশ সদস্যের সম্মতিতে আবেদনকারী রাষ্ট্র সদস্যপদ লাভ করে।
11. ভেটো বলতে কী বোঝায় ?
উত্তর: সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে কোন প্রস্তাব গ্রহণের ক্ষেত্রে স্থায়ী ৫ টি সদস্য রাষ্ট্রের সম্মতি প্রয়োজন। যে কোনো স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র অসম্মতি জানালে প্রস্তাবটি বাতিল হয়ে যায়। স্থায়ী সদস্যদের অসম্মতিজ্ঞাপক ভোটে কোন প্রস্তাব বাতিল করার ক্ষমতাকে ভেটো বলে।
12. ডবল ভেটো বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী ৫ টি সদস্য রাষ্ট্র ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে। প্রয়োজনে এইসব সদস্য রাষ্ট্র একই বিষয়ে দুবার ভেটো দিতে পারে, একে ডবল ভেটো বলে।
13. যুগ্ম নিরাপত্তা বলতে কী বোঝো ?
উত্তর: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে বিভিন্ন রাষ্ট্র নিজেদের নিরাপত্তা ও বিশ্বশান্তি রক্ষার জন্য একক প্রচেষ্টার পরিবর্তে মিলিত প্রচেষ্টার গুরুত্ব উপলব্ধি করেছিল। এইভাবে যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে যে শান্তি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছিল, সেটাই যুগ্ম নিরাপত্তা নামে পরিচিত।
14. বারুচ প্রকল্প কী ?
উত্তর: ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন কূটনীতিবিদ বার্নার্ড বারুচের নামে একটি আন্তর্জাতিক পারমাণবিক উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা তৈরি হয়, যাতে পারমাণবিক শক্তির বিপজ্জনক ব্যবহারের এবং এই শক্তির বিজ্ঞানসম্মত ও অর্থনৈতিক ব্যবহারের কথা বলা হয়। এই প্রস্তাব জাতিপুঞ্জের সাধারণ সভায় গৃহীত হলেও সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেটো প্রয়োগ দ্বারা এই প্রস্তাব নিরাপত্তা পরিষদে বাতিল হয়। এই প্রস্তাবই বারুচ প্রকল্প নামে পরিচিত।
15. নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান কাজ কী?
উত্তর : সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের উপর বহু গুরুত্বপূর্ণ কার্যভার অর্পণ করা হয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান কাজ হল-
1. আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা।
2. আন্তর্জাতিক শান্তি বজায় রাখার জন্য যেকোনো বিষয়ে তদন্ত ,সালিশি ও শাস্তিদান করা।
3. আন্তর্জাতিক শান্তিভঙ্গকারী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক ও সামরিক অভিযান পরিচালনা করা।
4 স্থায়ী সদস্যরা কোন প্রস্তাবে ভেটো প্রয়োগ করে সেটি নাকচ করে দিতে পারে।
5. অভিযোগকারী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যাতে অন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলি সামরিক অভিযান চালায় ,সে ব্যাপারেও পরামর্শ দিতে পারে নিরাপত্তা পরিষদ।
6. আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই পরিষদ তদন্ত করতে পারে।
16. জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দুই বিবদমান রাষ্ট্রবিরোধী রাশিয়া ও আমেরিকার পৃথক পৃথক জোট গড়ে ওঠে। ভারতের নেতৃত্বে অনেক রাস্ট্র কোন জোটে যোগ না দিয়ে জোট নিরপেক্ষভাবে বৈদেশিক নীতি পরিচালনা করে। একে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন বলে।
17. সুয়েজ সংকট জাতিপুঞ্জের ভূমিকা কী ছিল ?
উত্তর: ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে মিশরের রাষ্ট্রপতি গামাল আবদেল নাসের সুয়েজ খাল জাতীয়করণ করলে ইংল্যান্ড ,ফ্রান্স ও ইসরায়েল যৌথভাবে মিশর আক্রমণ করে সুয়েজ খালের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট হয় ।শেষ পর্যন্ত জাতিপুঞ্জের সাধারণ সভা যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তাব দেয় এবং জাতিপুঞ্জের শান্তির সেনা মিশরে প্রবেশ করে ওই অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনে।
18. সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের ব্যর্থতাগুলি লেখ।
উত্তর : সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের ব্যর্থতাগুলি হল-
1. এই সংস্থা ভারত পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছে।
2. নয়া ঔপনিবেশিকতাবাদের হাত থেকে বিশ্বকে রক্ষা করতে পারেনি।
3. সর্বোপরি, উপসাগরীয় যুদ্ধ ও বর্ণবৈষম্য দূর করতে জাতিসংঘ ব্যর্থ হয়।
19. সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা আলোচনা কর।
উত্তর: প্রয়োজনীয় আর্থিক তহবিল সংগ্রহ, স্থায়ী নিজস্ব সেনাবাহিনী গঠন, নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি এবং সর্বোপরি রাশিয়া ও আমেরিকার মত বৃহৎ শক্তির প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়া ইত্যাদি পদক্ষেপ গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল রূপে প্রতিভাত হয়।
20. জাতিসংঘ কেন ব্যর্থ হয়েছিল?
উত্তর: মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে জাতিসংঘ স্থাপিত হলেও মূলত যেসব কারণে জাতিসংঘ ব্যর্থ হয়েছিল, সেগুলি হল-
1. জাতিসংঘের সাংগঠনিক দুর্বলতা,
2. তার ত্রুটিপূর্ণ ভোটদান পদ্ধতি,
3. আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মতো অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্রের জাতিসংঘের সদস্যপদ গ্রহণ না করা,
4. যুদ্ধকে বেআইনি ঘোষণা করলেও আগ্রাসনকে নিষিদ্ধ না করা,
5. জাতিসংঘের নিজস্ব সেনাবাহিনীর অভাব,
6. ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের তোষণনীতি এবং সর্বোপরি বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মহামন্দা।
21. জাতিসংঘ ও সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের মধ্যে সাদৃশ্য গুলি আলোচনা করো।
উত্তর: জাতিসংঘ ও সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের মধ্যে সাদৃশ্যগুলি হল-
1. বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ ধ্বংসলীলার পরই দুটি সংগঠন জন্ম নেয়। জাতিসংঘ গঠিত হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষে এবং জাতিপুঞ্জ গঠিত হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে।
2. উভয় সংগঠনেরই লক্ষ্য ছিল আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বিধান করা।
3. উভয় সংস্থারই অঙ্গসমূহের গঠনতন্ত্রে মিল ছিল।
4. উভয় সংস্থাই যুদ্ধের পরিবর্তে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের নীতিতে বিশ্বাসী ছিল।
5. জাতিসংঘ ও জাতিপুঞ্জ উভয়েরই সদস্য রাষ্ট্রগণ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ভেটো প্রয়োগ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধা দিতে পারে।
6. জাতিসংঘের ম্যান্ডেট ও জাতিপুঞ্জের অছি ব্যবস্থা প্রায় একই জিনিস।
22. জাতিসংঘ ও সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের মধ্যে বৈসাদৃশ্যগুলি আলোচনা করো।
উত্তর: জাতিসংঘ ও সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের মধ্যে বৈসাদৃশ্যগুলি হল-
1. জাতিসংঘে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যোগ না দেওয়ায় তা প্রথম থেকেই দুর্বল ছিল। কিন্তু সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথম থেকে যুক্ত আছে।
2. জাতিসংঘ প্রধানত শান্তি ও নিরাপত্তার দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেছিল। কিন্তু জাতিপুঞ্জ শান্তি ও নিরাপত্তার পাশাপাশি বিশ্ব মানব সমাজের সংস্কৃতির বিকাশের দিকেও দৃষ্টি রাখে।
3. জাতিসংঘের তুলনায় সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ অনেক বেশি প্রতিনিধিত্বমূলক প্রতিষ্ঠান।
4. জাতিসংঘের সাফল্য ভার্সাই চুক্তির উপর নির্ভরশীল ছিল, কিন্তু জাতিপুঞ্জের সাফল্য কোন শক্তির উপর নির্ভরশীল নয়।
5. জাতিসংঘের সদস্য নয় এমন কোন রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে জাতিসংঘ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারত না কিন্তু অসদস্য রাষ্ট্রগুলিকেও সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ শাস্তিপ্রদান করার অধিকারী।
6. জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্রগুলি নিজেদের বিশ্ববাসীর প্রতিনিধিরূপে ভাবতে পারেনি। অন্যদিকে জাতিপুঞ্জের সনদেই বিশ্ববাসীর নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
23. পঞ্চশীল চুক্তি কী? এই চুক্তির আদর্শগুলি লেখ।
উত্তর: ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ -এন -লাই এক শুভেচ্ছা সফরে ভারতে আসেন। এই সফরে তিব্বত সম্পর্কে উভয় দেশের মধ্যে একটা সমঝোতা হয়। ভারত ও চীন ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নির্ধারণ এর কাছে পাঁচটি নীতি অনুসরণ করার অঙ্গীকার করে। সেই পাঁচটি নীতির ভিত্তিতে উভয় দেশ এক চুক্তি স্বাক্ষর করে। এটি পঞ্চশীল চুক্তি নামে পরিচিত।
চুক্তির আদর্শ: পঞ্চশীলের আদর্শ গুলি হল-
1. প্রত্যেক রাষ্ট্রের ভৌগলিক অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর পারস্পরিক শ্রদ্ধা প্রদর্শন,
2. পরস্পরের বিরুদ্ধে আগ্রাসন থেকে বিরত থাকা।
3. অন্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকা,
4. পারস্পরিক মর্যাদা জ্ঞাপন
5. শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান।
এই পঞ্চশীল নীতি কেবল ভারত-চীন সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রযুক্ত হয়নি। আন্তর্জাতিক জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের ভিত্তিও এই পাঁচটি নীতি। পৃথিবীর বিভিন্ন সার্বভৌম রাষ্ট্রের পারস্পরিক সম্পর্ক এই পাঁচটি নীতির উপর ভিত্তি করে গড়ে তুলতে পারলে পৃথিবীর শান্তি বজায় রাখা সম্ভব হবে বলেন নেহেরু মনে করতেন।
24. বান্দুং সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলি সংক্ষেপে লেখ।
উত্তর: ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দের ১৮ থেকে ২৬ এপ্রিল ইন্দোনেশিয়ার বান্দুং শহরে একটি সম্মেলন আহূত হয়। এখানে এশিয়া ও আফ্রিকার মোট ২৬ টি দেশ মিলিত হয়। জহরলাল নেহেরুর নেতৃত্বে ভারত এই সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বান্দুং সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের সূচনা করে।
বিভিন্ন প্রস্তাব : বান্দুং সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাব গুলি হল-
1. মৌলিক মানবাধিকার ও সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সনদের প্রতি মর্যাদা দেখাতে হবে।
2. প্রতিটি রাষ্ট্রের আঞ্চলিক অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দেয়া হবে।
3. বর্ণগত ও জাতিগত বৈষম্যে স্বীকার করা হবে না।
4. আগ্রাসনমূলক কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকতে হবে।
5. কোন বৃহৎ শক্তি আগ্রাসনে শামিল হওয়ার জন্য চাপ দিলেও মাথা নত করা হবে না।
6. সব জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার স্বীকার করা হবে।
7. সমস্ত বিরোধ ও মতভেদ শান্তিপূর্ণ পথে পারস্পরিক আলাপ আলোচনা বা মধ্যস্থতার মাধ্যমে মিটিয়ে নেওয়া হবে।
8. প্রতিদিনের ন্যায় নীতি ও সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের দায়বদ্ধতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে।
25. আটলান্টিক চার্টারের গুরুত্ব কী ছিল?
আটলান্টিক চার্টারের গুরুত্ব : আন্তর্জাতিক সংগঠন সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ গড়ে তোলার পেছনে আটলান্টিক চার্টারের গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে। জাতিপুঞ্জের সনদের বিভিন্ন ধারায় আটলান্টিক চার্টারের ধারণাগুলির প্রভাব স্পষ্ট। সুস্থ, সুন্দর মানবজাতির গড়ে তোলার অঙ্গীকার এর মধ্যে দিয়ে আটলান্টিক চার্টার নবযুগের সম্ভাবনা সূচিত করে। কিন্তু অদ্যাবধি আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। মধ্য এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে পারস্পরিক সংঘাত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খবরদারি বিশ্ব শান্তি বিঘ্নিত করেছে। আটলান্টিক চার্টারে প্রত্যেকটি জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের কথা বলা হলেও ভারতসহ এশিয়া-আফ্রিকার অনেক দেশের ক্ষেত্রে এই নীতি প্রযুক্ত হয়নি। প্রত্যেকটি রাষ্ট্রকে সমান অর্থনৈতিক সুযোগ সুবিধা প্রদানের আশ্বাস দেয়া হলেও বাস্তব ক্ষেত্রে অনুন্নত দেশগুলোকে প্রয়োজনমতো অর্থ দেওয়ার ব্যবস্থা হয়নি। এই কারণে বিশ্ব ধনশালী, উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত এই তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। তবে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ঘটানোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি গৃহীত হয়েছে। সর্বোপরি একথা অনস্বীকার্য যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এখনো পর্যন্ত বিশ্ব যুদ্ধের সম্ভাবনা দেখা যায়নি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন